top of page

সরস্বতী পুজোর শুভ লগ্নে দ্বিতীয় প্রকাশ,
১ লা ফাল্গুন, ১৪৩০;
১৪ ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

মুখবন্ধ

 

প্রবাসী জীবনের কর্মব্যস্ততায়, যখন নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়, তখনই মন যান্ত্রিক দিনলিপি থেকে পালিয়ে একছুটে নিজের গ্রাম, নিজের মাটি, নিজ শৈশবে ফিরে যেতে চায়। বুকভরে মাটির সোঁদা গন্ধ, কাশফুলের দোলা, আঁজলা ভরা শিউলি, ঘাসের উপর শিশিরবিন্দু, সব যেন একমুঠিতে ফিরে পেতে চায় মন। বর্ষবরণের সাথে সাথেই এসে পড়ে বসন্ত পঞ্চমী, আমাদের প্রিয় পলাশপ্রিয়ার আসার সময়।মনে পড়ে যায় সক্কাল সক্কাল নিম-হলুদের স্নান সেরে, হাসি কলরবে কচিকাঁচাদের শাড়ি-ধুতি পাঞ্জাবিতে স্কুলে যাওয়ার তাড়া।

 

আমরা, আই আই টি বম্বের বৃহত্তম পরিবারও, প্রতিবছর মেতে উঠি বাগদেবীর আরাধনায়। এ যেন পরীক্ষা, পড়াশোনা, গবেষণার পাশাপশি পুরো পরিবারের একত্রিত হওয়া। বাংলার বাইরে থেকেও বাংলাকে হৃদয়ে ধারন করে থাকা। মায়ের পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, ভোগ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে সাথে গতবছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে, আই আই টি বম্বের সরস্বতী পুজোর, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পত্রিকা ‘স্বর ও লিপি’-র প্রথম প্রকাশ ঘটে। এবছর ‘স্বর ও লিপি’ দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করছে। অতি অল্প সময়ে আমরা যে বিপুল সাড়া পেয়েছি, তাতে আমরা আপ্লুত। বিভিন্ন স্বাদের লেখনী আমাদের ‘স্বর ও লিপি’-কে সমৃদ্ধ করেছে। জীবনের সকল প্রকার সম্পর্ক, সুখ-দুঃখ, প্রেম, রোমাঞ্চ, ইতিহাসের সাথে সাথে নতুন সংযোজন হয়েছে ভ্রমণকাহিনী এবং সাংস্কৃতিক ক্যুইজ। সাড়া পেয়েছি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তনীদের কাছ থেকেও। প্রচুর উৎসাহের সাথে তাঁরাও অংশগ্রহণ করেছেন।

 

একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে, পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠার অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের ‘স্বর ও লিপি’ এই বছর সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল। ওয়েবসাইটের উল্লেখ অনুযায়ী আমরা প্রায় এক হাজার পাঠক-পাঠিকার হৃদয় ছুঁতে পেরেছি। আশা রাখি আমরা এবারে আরো বেশি সংখ্যক পাঠক-পাঠিকার মনে স্থান করে নিতে পারব।

 

আমি ধন্যবাদ জানাই সকল সৃষ্টিশীল মানুষদের, যারা তাঁদের মূল্যবান সময় এবং সৃজনশীলতা দিয়ে ‘স্বর ও লিপি’-কে সিঞ্চন করেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন। ধন্যবাদ জানাই সমগ্র আই আই টি বম্বের বৃহত্তর পরিবারকে, যাদের সকলের আশীর্বাদ ও ভালোবাসায় ‘স্বর ও লিপি’ পরিপূর্ণতা পেয়েছে। এগিয়ে চলার ভরসা পেয়েছে। বিশেষ ধন্যবাদ জানাই ‘স্বর ও লিপি’-র সম্পাদকীয় দলকে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কলেবর লাভ করেছে ‘স্বর ও লিপি’-র দ্বিতীয় সংকলন। ধন্যবাদ জানাই আই আই টি বম্বের পুজো কমিটিকে। ধন্যবাদ জানাই সকল স্পনসরদের যারা আমাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন।

 

বাগদেবীর আশীষ এবং সকলের শুভেচ্ছা পাথেয় করে প্রকাশ পাচ্ছে ‘স্বর ও লিপি’-র দ্বিতীয় সংকলন, যা বাংলার বাইরে বাঙালী সত্ত্বাকে অবগাহন করার একটি ছোট্ট প্রচেষ্টা।

  

 

ধন্যবাদান্তে,

প্রসেনজিৎ ঘোষ (প্রেসিডেন্ট)

নিবেদিতা ঘোষ

সম্পাদকীয়

রাতের আকাশের পানে তাকিয়ে ভাবি -
আমাদের মধ্যে সবটুকু আলো নিভে গেছে
কোন প্রাচীন তারকা রূপে, দূরে কোথাও,
অন্ধকারের গভীরে, জ্বলছি, জ্বলে নিভে গেছি বলে।

আমরা কখনও না কখনও কাব্যের রসে মশগুল হয়ে, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যে নিমজ্জিত হয়ে অথবা ভাবনার অতল তলে পৌঁছে, অন্তর থেকে সাহিত্যের বহ্নিশিখায় জ্বলে উঠি, অনেকটা সৃষ্টির ক্ষণে নবজাতক নক্ষত্রের মত। আমাদের মনেও সৃষ্টি হয় অপূর্ব সব কল্পনার রঙিন চিত্রাঙ্কন। দুর্ভাগ্যবশত, অনেকেই রোজনামচা জীবনের একঘেয়েমির ধাক্কায় সেইসব সৃষ্টিশীল ভাবনাচিন্তা মনের অগোচরে হারিয়ে ফেলে। আগুন নিভে যায়, মৃত নক্ষত্রের শেষ নিশ্বাস যেন। 

এইসব হারানো চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশের মুক্ত মঞ্চ হিসেবে   'স্বর ও লিপি ' -র  আবির্ভাব।  সাহিত্য থেকে শত হাত দূরের কোন বিষয়ের  গবেষণায় ডুবে থাকা মানুষের মধ্যেও যে সাহিত্য জ্ঞান,  শিল্পীস্বত্ত্বা এবং কল্পনার অদ্বিতীয় সংমিশ্রণ বিদ্যমান,   ' স্বর ও লিপি'  তার জ্বলন্ত প্রমাণ। হয়তো ব্যস্ততার ধুলো মাখা আস্তরণে সেই প্রতিভা কিছুটা চাপা পড়ে যায়, অথবা সংকোচের বেড়াজালে আটক হয়ে থাকে নানাবিধ সাহিত্য ও শিল্পকলার প্রকাশ। এই পত্রিকা সেইসব মানুষের প্রতিভাকে  শ ' য়ে শ ' য়ে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছে।

শিল্পীর শিল্পের একমেবাদ্বিতীয়ম মূল্য তার যোগ্য প্রশংসা। 'স্বর ও লিপি'-র প্রথম প্রকাশের পরে অনেকের মুখে ধন্যবাদের বাক্য শুনেছিলাম, তাদের লুক্কায়িত শৈল্পিক সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ ছাপার অক্ষরে প্রত্যক্ষ করে। তাদের রচনা, চিত্রশিল্প অথবা শিল্পকলা দেখে আবার অনেককে বলাবলি করতে শুনেছি 'অমুকের যে তমুক প্রতিভা কোথায় লুকানো ছিল এতদিন তো জানতাম না?' আর এই সামান্য প্রশংসাসূচক বক্তব্যে জিতে যায় শিল্প ও তার সৃষ্টিকর্তা। 

'ডেড পোয়েটস সোসাইটি' চলচ্চিত্রে স্বর্গীয় রবিন উইলিয়ামসের সেই বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে যাচ্ছিল ম্যাগাজিনে জমা করা একরাশ গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, চিত্রাঙ্কন, সঙ্গীত, আলোকচিত্রের উপর চোখ বোলাতে বোলাতে। '.... But poetry, beauty, romance, love....these are what we stay alive for....'  এর থেকে খাঁটি কথা হয়তো খুব কমই শুনেছি। রোজকার নিত্যনতুন সমস্যা অথবা ব্যস্ত সমস্ত জীবনে মানুষ তো শিল্পের কাছেই আশ্রয় নেয়, বেঁচে থাকার আনন্দ অবগাহন করতে। জীবনানন্দের বনলতা সেন আক্ষরিক অর্থে সকলের কাছে মনুষ্য চরিত্র নয় - তা হতে পারে কোনো তুলির টান, কলমের আঁচড়ে সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলা, অকৃত্রিম সৌন্দর্য্যকে লেন্সবন্দি করে নেওয়া কিংবা কণ্ঠে সুরের ঝঙ্কার তোলা - এ সবই  'দুদণ্ড শান্তি ' প্রদান করে। 

একইভাবে, কাজের ব্যস্ততার মাঝে আই আই টি বম্বের ক্যাম্পাসে এক ফোঁটা বিশ্রাম রূপে দুইদিন ব্যাপী সরস্বতী পুজোর উৎসব। এই দুইদিন যেন সত্যিই মনে হয় 'আনন্দধারা বহিছে ভুবনে'। এই বিশ্রাম এবং আনন্দ লহরীর মাঝে আমরা একান্তভাবে চাই আমাদের এই আদরের পত্রিকার পাতা উল্টে দেখুক আরো আরো পাঠক। প্রতিভার অমূল্য রত্নাকরে গা ভাসিয়ে দিতে আমন্ত্রণ জানাই আপনাদের সকলকে। 

'স্বর ও লিপি'-র দ্বিতীয় সংখ্যা বাস্তবায়ন সম্ভব হওয়ায় কিছু মানুষের নিকট আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ আমরা। সরস্বতী পূজা ২০২৪-এর প্রেসিডেন্ট প্রফেসর প্রসেনজিৎ ঘোষ স্যারের ক্রমাগত অনুপ্রেরণার জন্য আমরা তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই। দিব্যেন্দু দা এবং শুভঙ্কর দা, তোমাদের ক্রমাগত নির্দেশ এবং অমূল্য পরামর্শের জন্য আমরা সকলে গভীর ভাবে ঋণী। পারিজাত দার অসীম ধৈর্য এবং সাহায্য ছাড়া এই ম্যাগাজিন হয়তো সম্ভবই হতো না। দেবদ্যূতি দির অনিমেষ উৎসাহ প্রদানকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। পরিশেষে নমস্কার জানাই আপনাদের সকলকে, যাদের অপার আশীর্বাদে 'স্বর ও লিপি' পেয়েছে তার অনন্য রূপ। আসুন, ডুবে যাই পত্রিকার পাতায় পাতায় সাজানো প্রেম, বিষাদ, ইতিহাস, রোমাঞ্চে....
                                                                                                                                                                               ধন্যবাদান্তে,

'স্বর ও লিপি'-র দলবল

bottom of page